রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১
প্রত্যেক বছর বিশ্বের নানা প্রান্তের লাখ লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। অনেকে বৈধ উপায়ে আবার কেউ কেউ ভিন্ন পথে সাগর-নদী-জঙ্গল পেরিয়ে দেশটিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকেই বৈধ উপায়ে যাওয়ার কৌশল জানেন না। আমেরিকায় বৈধ উপায়ে যাওয়ার খুঁটিনাটি নিয়ে তাদের জন্যই আজকের এই প্রতিবেদন।
যেভাবে ভিসার আবেদন করবেন
সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিদেশিদের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা দূতাবাস এবং কনস্যুলেটের মাধ্যমে ভিসা ইস্যু করে থাকে। কেউ যদি ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী ৩৯টি দেশের নাগরিক হন, তাহলে তার ব্যবসায়িক মিটিং বা ছুটি কাটাতে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার প্রয়োজন হয় না।
তবে কী কারণে আপনি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান এবং ভিসা কেন প্রয়োজন সেটির ওপর নির্ভর করছে ভিসা পাবেন কিনা। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস অথবা কনস্যুলেটগুলো থেকে যেসব ভিসা দেওয়া হয়, তা জেনে নেওয়া যাক।
যেভাবে ঢুকতে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সেখানে পৌঁছানোর পর আপনাকে অবশ্যই বৈধ ভ্রমণ নথি দেখাতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ভ্রমণের তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে কিনা তা নির্ভর করে আপনি যে দেশ থেকে যাচ্ছেন এবং সেদেশে আপনার নাগরিকত্বের ওপর।
দেশটিতে প্রবেশের আগে বিদেশি নাগরিকদের অবশ্যই কোভিড-১৯ এর পূর্ণ ডোজের টিকা নেওয়া থাকতে হবে।
অন-অ্যারাইভাল ভিসাধারীরা ছাড়া অন্যরা যেভাবে যেতে পারবেন
* সব দেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের সেখানে যাওয়ার জন্য একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। আর এই ভ্রমণকারীদের নাগরিকত্ব যে দেশেরই হোক না কেন পাসপোর্ট থাকা অপরিহার্য।
* স্থায়ী বাসিন্দা এবং বিদেশি নাগরিকদেরও মার্কিন ভিসার প্রয়োজন হবে। স্বপ্নের এই দেশে যাত্রা শুরুর আগে আপনাকে অবশ্যই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
* নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকরা ‘গ্লোবাল অ্যান্ট্রি’ প্রোগ্রামের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনি গ্লোবাল অ্যান্ট্রির জন্য আবেদন করার যোগ্য কিনা তা দেখুন এখানে ক্লিক করে।
যেভাবে অভিবাসী ভিসার জন্য আবেদন করবেন
প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পান। এই কার্ডের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে মনোনীত করা হয় তাদের। আর এই ১০ লাখ মানুষের মধ্যে অনেকেই অভিবাসী ভিসার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
অভিবাসী ভিসার ধরন
যারা অভিবাসী ভিসা ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান, তাদের বেশিরভাগই নিচের যেকোনও একটি ভিসা পান:
* পরিবার-ভিত্তিক ভিসা। অর্থাৎ যাদের পরিবারের সদস্য মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা তারা এই ভিসা পাবেন
* কাজ বা চাকরি ভিসা। এজন্য সাধারণত একজন মার্কিন নিয়োগকর্তার কাছ থেকে চাকরির অফার লেটারের প্রয়োজন হয়।
অভিবাসী ভিসা পাওয়ার জন্য যা জরুরি
১. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কারও স্পন্সর নেওয়ার প্রয়োজন হবে অথবা অভিবাসী হিসেবে পিটিশন জমা দিতে হবে।
২. পিটিশন অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। পিটিশনের অনুমোদন মিললে অভিবাসী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আর এই আবেদন করতে হবে বিদেশে মার্কিন কনস্যুলেটের মাধ্যমে।
৩. এরপর মেডিক্যাল টেস্ট সম্পন্ন করতে হবে।
৪. এবার সব কাগজপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য যেতে হবে।
৫. আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
অভিবাসী ভিসা পাওয়ার আরেকটি উপায় হলো ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে যেসব দেশের অভিবাসীর হার যুক্তরাষ্ট্রে কম, সেসব দেশকে অগ্রাধিকার হিসেবে ধরে ডিভি লটারিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে আপাতত ডিভি লটারি প্রোগামে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অভিবাসী ভিসা পাওয়ার পর কী করবেন?
একবার অভিবাসী ভিসা পেয়ে গেলে আপনাকে এজন্য ইউএসসিআইএস নামে অভিবাসী ফি জমা দিতে হবে। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশদ্বারে কর্মকর্তাদেরকে দেওয়ার জন্য একটি সিল করা নথির প্যাকেট পাবেন। যা সেখানে পৌঁছানোর পর মার্কিন কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।
এবারে আপনার সেই স্বপ্ন হাতের মুঠোয় চলে আসবে। আপনি স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবেন এবং ই-মেইলে পৌঁছে যাবে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই ‘গ্রিন কার্ড’ নামের সোনার হরিণ।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারীদের অভিবাসী ভিসার আবেদন নিষ্প্রয়োজন
আপনি যদি ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে থাকেন, তাহলে আপনাকে অভিবাসী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে না। বরং আপনার সাম্প্রতিক স্ট্যাটাসের ভিত্তিতে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
এজন্য আপনাকে নিজ দেশেও ফিরতে হবে না। তবে অভিবাসী ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে আপনাকেও।
* অবশ্যই আপনাকে কারও স্পন্সর নেওয়ার প্রয়োজন হবে অথবা অভিবাসী পিটিশন জমা দিতে হবে।
* পিটিশন এবং অভিবাসী ক্যাটেগরির ভিসার অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে থেকেই গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
* যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পরও আপনাকে মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করতে হবে। এরপর সাক্ষাৎকারে যেতে হবে এবং আবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
শরণার্থী এবং আশ্রয়
* শরণার্থী
শরণার্থী বলা হয় এমন লোকজনকে যারা দেশে নির্যাতন-নিপীড়ন (বা নিপীড়নের ভয়ে) এবং যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র নিরাপত্তার খোঁজ করেন।
আপনি যদি মনে করেন শরণার্থী হিসাবে সুরক্ষা প্রয়োজন, তাহলে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর বা অন্য আন্তর্জাতিক অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এসব সংস্থার কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে নিকটস্থ মার্কিন দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন।
* আশ্রয়
শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার লোকজনকে আশ্রয় দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদনের জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।
* যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার পর আপনি যা করতে পারবেন
১. স্বামী/স্ত্রী এবং সন্তানদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনার অনুমতি পান। ক্লিক করুন এখানে
২. স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা লাভ। ক্লিক করুন এখানে