শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষিকার কাণ্ডে হতবাক অভিভাবক ইউএনওসহ শিক্ষকসমাজ

জীবন যাপন জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম
প্রাথমিক শিক্ষিকার কাণ্ডে হতবাক অভিভাবক ইউএনওসহ শিক্ষকসমাজ

শিক্ষকের টেবিলের উপর বসিয়ে হাতে বেত দিয়ে, তিন বছর বয়সি কন্যাশিশুকে দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান করালেন চরফ্যাশন উপজেলার ৩৯নং হাজারীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলাম।

কন্যাশিশুটি তার মেয়ে। ওই সময় তিনি শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে শিশুর পাঠদানের ভিডিয়োচিত্র মোবাইলে ধারণ করেন; যা পরে ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন শিক্ষিকা।

ওই শিশুর পাঠদানের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়লে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় নানা সমালোচনা। দুই-একজন বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করলেও বেশিরভাগ মানুষ বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে হাফছা নামের ওই শিক্ষিকা নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের শিশু কন্যার পাঠদানের ভিডিয়ো পোস্ট করলে মুহূর্তের মধ্যে ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষিকা হাফছা খানম শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের কোলের শিশুর পাঠদানের ভিডিয়োচিত্র মোবাইলে ধারণ করে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন।

তিনি ওই ভিডিয়োর ক্যাপশনে নিজের শিশু কন্যাকে ম্যাডাম আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘ম্যাডাম যখন দ্বিতীয় শ্রেণির ইংরেজি ক্লাসে বাকবাকুম পায়রা কবিতা শেখায়’।

পাঠদানকারী ওই শিশু তার ছোট মেয়ে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, এই শিক্ষিকা যদি সত্যিই পড়াশোনা করে শিক্ষকতা পেশায় আসতেন তাহলে এমন জ্ঞানহীন কাজ করতেন না। তিনি সম্ভবত শ্রেণিকক্ষটাকে নিজের বসতঘর মনে করেছেন। ওনার কাছ থেকে আমাদের সন্তানকে কী ধরনের শিক্ষা অর্জন করবে?

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষিকা হাফছা খানম ওরফে প্রিয়া ইসলামের স্বামী চরফ্যাশন পৌরসভা শ্রমিক লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সবুজের প্রভাব খাটিয়ে জালিয়াতি করে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেছেন।

তার স্বামী চরফ্যাশন পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি থাকার সুবাদে তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষায় নিজে অংশগ্রহণ না করে টাকার বিনিময়ে অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

তবে নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শিক্ষিকা হাফছা খানম। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘দুষ্টমির ছলে ওই ভিডিয়োটি ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছি। বিষয়টি এমন হয়ে যাবে তা আমার জানা ছিল না। এখনই আমি ভিডিয়োটি ডিলেট করে দেবো।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মামুন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে বিষয়টি আমি মানুষের কাছ থেকে শুনেছি। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যদি কোনো শিক্ষক এমনটা করে থাকেন আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, ‘বিষয়টিকে তদন্ত করে দেখা হবে।’

ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, ‘কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে তাদের শিশু সন্তান নিয়ে যাওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তার শিশুকে দিয়ে ক্লাসে পাঠদান করানোর কোনো বৈধতা তার নেই। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Side banner