বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
ইএফটির (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের এক লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭ জন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার ৪৪৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ইএফটিতে বেতন দেওয়া হবে। এছাড়া চলতি মাসে আরও শিক্ষক-কর্মচারীর ডাটা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ডিসেম্বরের বেতন দেওয়ার কথা রয়েছে। জানুয়ারির মধ্যে তিন ধাপে সব শিক্ষকের বেতন-ভাতা ইএফটিতে দেওয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, স্কুল কলেজের তিন লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে কিছু শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ তাদের ডাটায় ভুল সংশোধন করতে জানুয়ারি মাস পার হয়ে যাবে। সে কারণে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী ডিসেম্বর মাসের বেতন জানুয়ারিতে পেলেও কিছু শিক্ষক-কর্মচারী এ মাসে পাবেন না।
তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর বলছে-চলতি মাসের মধ্যেই ডিসেম্বরের বেতন সব শিক্ষক-কর্মচারীকে ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে এক লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭ জনের বেতন ইএফটির মাধ্যমে দিয়েছি। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার ৪৪৪ জন শিক্ষক-কর্মচারীর ডাটা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট (ইএমআইএস সেল) খন্দকার আজিজুর রহমান জানান, বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত তিন লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ডিসেম্বর মাসের বেতন প্রথম ধাপে এক লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭ জন ইএফটির মাধ্যমে পেয়েছেন। পরবর্তী ধাপে বেতন দেওয়ার জন্য ডাটা প্রস্তুত করা হয়েছে ৬৭ হাজার ৪৪৪ জনের। এর পরের সপ্তাহে, তৃতীয় ধাপে যাদের বেতন দেওয়া যাবে তাদের নিয়ে কাজ করছি।’
২০২১ সালে ইএফটিতে বেতন দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩১ ডিসেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, ‘জানুয়ারিতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হবে ইএফটির মাধ্যমে।’
পরে ইএফটিতে বেতন দিতে বছরের প্রথম দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং অধিদফতরের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও’র অর্থ, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা অনলাইনে ইএফটি পদ্ধতিতে পাঠানো উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। ধাপে ধাপে বেতন দেওয়া শুরু হয়।
উদ্বোধনের আগে স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডাটা প্রস্তুত না করেই জানুয়ারিতে বেতন দেওয়ার কাজ শুরু হয়। ডাটা প্রস্তুত করে বেতন দেওয়ার কার্যক্রম চলতে থাকে।
শিক্ষা অধিদফতর জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সব ডাটা ঠিক না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। কিছু ভুল থাকার পরও এবার ইএফটিতে অনেকের বেতন ছাড়া হচ্ছে। তবে যাদের ভুল বেশি তাদেরটা সংশোধন করা হচ্ছে। পরবর্তী মাসের বেতনের আগে ইএফটিতে বেতন দিতে সমস্যা হবে না।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে ইএফটিতে বেতন দেওয়া শুরু হয়েছে। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ডাটা ঠিক করে তারপর বেতন দেওয়া হলে সমস্যা হতো না। শিক্ষক-কর্মচারীদের জানুয়ারি শেষে বেতন নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।
এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর আট বিভাগের ৮টি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ডিসেম্বরের বেতন পরীক্ষামূলক জানুয়ারিতে ইএফটির মাধ্যমে দিচ্ছে। বাকি মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন ইএফটিতে দেওয়ার জন্য ডাটা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এপ্রিলের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ইএফটিতে দেওয়া হবে বলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।