রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমাদের জিহ্বায় যা ভালো লাগে তার অধিকাংশ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জীবনাচার নিয়ন্ত্রণ রাখলে ডায়াবেটিস প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধও সম্ভব।
রবিবার (২০ নভেম্বর) ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিসকে জানুন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০২২ উপলক্ষে বিএসএমএমইউ’র এই বিষয়ে মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে একটি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ আয়োজন করে।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ২ কোটি মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত এবং ২ কোটি মানুষ প্রি-ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। প্রি-ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যদি এ রোগ থেকে রক্ষা করা যায় তবে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ কোটি টাকা সঞ্চয় হবে। এ টাকা দিয়ে আরও কয়েকটি পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে।’
বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে শরীর চর্চা, খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীর চর্চার জন্য যত দ্রুত সম্ভব জিমনেসিয়াম নির্মাণ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস নির্মূলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন কংগ্রেস আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর অব ডায়াবেটিস হিসেবে ঘোষণা করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডায়বেটিসের ব্যয়বহুল ওষুধ মেডফরমিন বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে, যা সারা বিশ্বে প্রসংশিত হয়েছে।’
ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডায়বেটিস, ক্যান্সার, হাইপারটেনশন, কার্ডিয়াক রোগ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা ডায়বেটিসের কারণে অনেক অঙ্গ আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে প্যানক্রিয়াস, কিডনি, চক্ষু অন্যতম।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন বিশেষজ্ঞ মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম, নেফ্রোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ ফজলুল সেলিম, অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথী স্ক্রিনিং ও তার চিকিৎসা সম্বন্ধে সহযোগী অধ্যাপক (ভিট্রিও-রেটিনা) ডা. তারিক রেজা আলী বলেন, ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সারা বিশ্বে ২০-৭৪ বছর বয়সী মানুষের দৃষ্টি শক্তি হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। এই রোগের প্রকোপ ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের মধ্যে শতকরা ৩৪ দশমিক ৬ ভাগ। এদিকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের চোখে বিশেষ করে রেটিনায় কোনও সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয়ের কোনও সঠিক দিকরেখা আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীকে বছরে অন্তত একবার চোখের রেটিনা পরীক্ষা করাতে হয়। একটি বিশেষ ড্রপ দিয়ে চোখের মনির আকার বড় করে এই পরীক্ষা সহজেই করা সম্ভব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, প্রজনন বিষয়ক নানা সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। ডায়াবেটিস রোগীর ৮০ শতাংশ মারা যায় হার্ট অ্যাটাকে। ডায়াবেটিস না থাকলে কিডনি রোগী অনেক কমে যেতো। ডায়াবেটিসের কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেড়ে যায়।’
সেমিনারে প্যানেল অব এক্সাপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসানাত, অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন রেসপেরেটরি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসকরা অংশগ্রহণ করেন।