রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১
সকালে ঘুম থেকে উঠেই চা বা কফির কাপে চুমুক দিতে পছন্দ করেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ তো সারাদিনে বেশ কয়েক কাপ চা বা কফি পান করেন। বিশেষ করে শরীর ও মন চাঙা করতেই কমবেশি সবাই পান করেন চা বা কফি। হয়তো কাজের চাপে কেউ রিল্যাক্স হতে পান করেন চা-কফি আবার কেউ হয়তো রাত জেগে কাজ করার জন্য ঘুম কাটাতে পান করেন বহুল জনপ্রিয় এই পানীয়।
জানলে অবাক হবেন, কফির স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। ইমপ্যাক্ট ফিটনেসের চিকিৎসা উপদেষ্টা লিয়ান পোস্টনের মতে, কফি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, লিভার ডিজিজ, পিত্তথলির পাথর, ক্যানসার ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কফিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো মূল্যবান যৌগ আছে, যা ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল মোকাবিলা করে। শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কমায় ও রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে কফি। জেনে নিন নিয়মিত কফি পান করলে শরীরে মিলবে যত উপকার-
শক্তির মাত্রা বাড়ায়
কফি উত্তেজক ক্যাফেইন সমৃদ্ধ। ক্যাফেইন পরিমিতভাবে গ্রহণ করলে শক্তির মাত্রা বাড়ে, কারণ এটি বিপাকীয় হার ও অ্যাড্রেনালিনের নিঃসরণ বাড়ায়। কফি ডোপামিনকেও বাড়িয়ে তোলে, যা মেজাজ উন্নত করে।
ওজন কমায়
২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রায় কফি পানের সঙ্গে শরীরের চর্বি কমার সংযোগ আছে, বিশেষ করে পুরুষদের মধ্যে। ২০২০ সালের আরেক গবেষণায় নারীদের মধ্যেও ওজন কমার একই প্রভাব দেখা গেছে।
শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ায়
২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দাবি করা হয়, কফি পান করলে শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ে। গবেষকরা দেখেছেন, যে নারীরা নিয়মিত এক থেকে দুই কাপ কফি পান করেন তাদের শারীরিক কার্যকলাপের হার ১৭ শতাংশ বেশি।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কমায় কফি। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কফির উচ্চ ব্যবহার কমাতে পারে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। এর কারণ হলো, কফি অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষের কার্যকারিতা রক্ষা করে। যা ইনসুলিন তৈরি করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কফিতে ম্যাগনেসিয়ামও আছে, যা শরীরকে চিনি ভাঙতে সাহায্য করে।
লিভারের রোগের ঝুঁকি কমায়
লিভারের রোগ একটি গুরুতর অবস্থা, যা সিরোসিসসহ জীবন হুমকির কারণ হতে পারে। ২০১৭ সালের এক গবেষণা বলছে, দৈনিক এক কাপ কফি দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমাতে পারে। প্রতিদিন ৪ কাপ পান করা ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকি কমাতে পারে। অন্যদিকে দৈনিক অন্তত ২ কাপ কফি লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের লিভারের সিরোসিসের ঝুঁকি কমায়। দৈনিক ২ কাপ কফি পান করলে করা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে বলে জানা গেছে গবেষণায়।
আলঝেইমারের ঝুঁকি কমায়
আলঝেইমার হলো একটি মস্তিষ্কের ব্যাধি, যা স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়। এর কোনো প্রতিকার নেই, তবে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে এর অগ্রগতি ধীর কো যায়। ২০১৬ সালে ২৯ হাজার অংশগ্রহণকারীর উপর করা এক বৃহৎ সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে যত বেশি কফি খায়, তাদের আলঝেইমার রোগ হওয়ার ঝুঁকি ততই কম।
পারকিনসনের ঝুঁকি কমায়
পারকিনসন ডিজিজ একটি স্নায়বিক অবস্থা, যা নড়াচড়া ও ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে। আলঝেইমারের মতো এরও কোনো নিরাময় নেই, তবে রোগের অগ্রগতি ধীর করার জন্য চিকিৎসা আছে। ২০২০ সালের এক সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, নিয়মিত কফি পানকারীদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এমনকি নিয়মিত কফি পান এই রোগের অগ্রগতিও ধীর করতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
কফি হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতে ও হৃদরোগের উন্নতিতেও সাহায্য করে। কার্ডিওভাসকুলার রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। ২০১৮ সালের এক সমীক্ষা বলছে, যারা প্রতিদিন ৩-৫ কাপ কফি পান করেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমায়। ২১ হাজারের মানুষের উপর করা ২০২১ সালের আরেকটি বড় গবেষণাও এই ফলাফলগুলোকে সমর্থন করেছে। তারাও এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, কফি খাওয়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তচাপও কমাতে পারে। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় গবেষকরা দেখেছেন, প্রতিদিন ৭ কাপ পান করার মাধ্যমে রক্তচাপের ঝুঁকি ৯ শতাংশ কমানো যায়। প্রতিটি অতিরিক্ত কাপের জন্য আরও ১ শতাংশ করে কমে ঝুঁকি।
শুক্রাণু বাড়ায়
২০০৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কফি পানের অভ্যাস পুরুষের গড় শুক্রাণুর গতিশীলতা বাড়ায়। এমনকি যারা প্রতিদিন ৬ কাপের বেশি পান করেন তাদের শুক্রাণুর গতিশীলতা যারা কফি পান করেন না তাদের তুলনায় বেশি। কফি প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকিও কমাতে পারে।
ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
ত্বকের জন্যও কফি অনেক উপকারী। কফির বিনে ক্যাফেইন ও পলিফেনল যেমন- ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড (সিজিএ) থাকে। কফির স্ক্রাব ব্যবহারে অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস ও ব্রণের সমস্যা দূর হয়। আর নিয়মিত কফি পানে বেসাল সেল কার্সিনোমা নামক ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
২৯ সেপ্টেম্বর ন্যাশনাল কফি ডে বা জাতীয় কফি দিবস। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে এই দিবস। কফির উৎপত্তি ঘটে নবম শতাব্দীতে। জানা যায়, এক ছাগল পালনকারীই নাকি আবিষ্কার করেছিলেন কফির। ১৫ শতকের মধ্যে কফি ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেন ও আরবের অন্যান্য স্থানে রপ্তানি করা শুরু হয়। এসব দেশে জনপ্রিয় এক পানীয়তে পরিণত হয়ে কফি। যা আজও বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
সূত্র: ফোর্বস/সিঙ্গেল কেয়ার