রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

বারান্দায় বা ছাদে সঠিক নিয়মে করলার চাষাবাদ পদ্ধতি

জীবন যাপন ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ০৪:৫৬ পিএম
বারান্দায় বা ছাদে সঠিক নিয়মে করলার চাষাবাদ পদ্ধতি

করলা আমাদের দেশে একটি অতি পরিচিত সবজী। এটা সাধারনত গ্রীষ্মকালীন সবজী। তবে সারা বছর ধরেই এর চাষ করা যায়। করলা মানবদেহের জন্য একটি অত্যন্ত উপকারী সবজি। এটাকে ভাজি করে অথবা রান্না করে খাওয়া হয়। আসুন জেনে নেই বাড়িতে কিভাবে এটার চাষ করতে হবে।

কিভাবে করলা চাষের টব/মাটি তৈরি করবেন:
করলা প্রায় সব মাটিতেই চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থসমৃদ্ধ দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে করলা ভাল হয় । করলা চাষ করার জন্য প্রথমে ২ ভাগ দোআঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২০-৩০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ২০-৩০ গ্রাম পটাশ সার, একত্রে মিশিয়ে ড্রাম ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন। অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে ।

করলা চাষে কি ধরণের টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই করবেন:
করলা চাষের জন্য মাঝারি অথবা বড় টব অথবা ড্রাম ব্যবহার করতে পারেন। ছাদে করলা চাষের জন্য হাফ ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে । হাফ ড্রামের তলায় ৩/৪ টি ছিদ্র করতে হবে যাতে সহজেই অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশিত হয় । হাফ ড্রামের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে ।

করলা জাত বাছাই করা:
আমাদের দেশে অঞ্চল ভিত্তিতে বেশকিছু জাতের করলা আছে। তবে সাধারণত দেখা যায় অপেক্ষাকৃত ছোট, গোলাকার এবং বেশী তিতা গুলোকে বলা হয় উচ্ছে । আর একটু বেশি লম্বা ও কিছুটা কম তিতাযুক্ত গুলোকে বলা হয় করলা।

করলা চাষ/রোপনের সঠিক সময়:
করলা সারা বছর চাষ করা যায়। তবে করলার বীজ বপন এবং চারা রোপণ করার উপুযুক্ত সময় হচ্ছে মাঘ মাস থেকে ফাল্গুন মাস এবং বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস। এসময় চারা অথবা বীজ রোপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

কিভাবে বীজ বপন ও সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিবেন:
পাত্রের মাটি যখন ঝুরঝুরে হবে তখন করলার বীজ বপন করতে হবে । করলার বীজ বপনের করার ক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। করলার বীজকে ২৪ ঘন্টা পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে । বীজ বোনার পর মাটি হাত দিয়ে সমান করে দিতে হবে এবং চেপে দিতে হবে ।

করলার বীজ বপন করার পর এতে নিয়মিত পানি দিতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যেন কখনই পানি জমে না থাকে। তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। তাই সঠিক নিয়মে পানি দিতে হবে।

সঠিক নিয়মে করলার চাষাবাদ পদ্ধতি/কৌশল:
করলা চাষের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে যত্ন নিতে হবে। গাছ একটু বড় হলে মাচা করে দিতে হবে। গাছে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। সঠিক পরিমানে সার দিতে হবে। করলার বীজ থেকে চারা বেরনোর পর উক্ত চারায় মাঝে মধ্যে পানি দিতে হবে। এবং চারার যত্ন নিতে হবে। করলা ধরা শুরু করলে সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে গাছে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর নিয়মিত দিতে হবে।

করলা চাষে পোকামাকড় দমন ও বালাইনাশক/কীটনাশক কিভাবে প্রয়োগ করবেন
করলার চাষ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে এতে যেন কোন প্রকার পোকার আক্রমণ না হয়। কারণ করলার সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা । এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মাঝে মাঝে করলা গাছে ভাল কীটনাশক স্প্রে করতে হবে । এছাড়াও ছাদ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে । তাহলে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ।

কিভাবে করলা বাগানের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন:
করলা গাছের অপ্রয়োজনীয় বা মরা লতা পাতা বাছাই করে ফেলে দিতে হবে। টবের মাটি কয়েকদিন পর পর হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। যাতে করলা গাছে আগাছা জন্মাতে না পারে । সেই সাথে মাটি কিছুটা আলগা করে দিলে গাছের শিকড়ের ভাল বৃদ্ধি হয় ।

করলার খাদ্য গুণাগুণ:
করলার মধ্যে অনেক ধরণের খাদ্যগুন বিদ্যমান। এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান আছে যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় আছে জলীয় অংশ ৯২.২ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১- ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২- ০.০২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৮ ক্যালরি।

করলার ঔষধি গুনাগুন:
করলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে নানান রকমের রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। করলা খাওয়ার ফলে রক্তের সমস্যা, খাবারের অরুচি, চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে। এছাড়া করলা বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

কখন করলা সংগ্রহ করবেন:
করলা ছোট থাকতে সংগ্রহ করতে পারেন আবার বড় হলেও সংগ্রহ করতে পারেন। করলা কাচা থাকতে সংগ্রহ করতে হয়। কারণ পেকে গেলে সেই করলা আর খাওয়া যায় না। তাই ফল পাকার আগেই করলা সংগ্রহ করতে হবে।

কি পরিমাণ করলা পাওয়া যাবে:
এক একটি করলা গাছ থেকে আপনি বেশ কিছু করলা পেতে পারেন। গাছ যত বেশী হবে ফলনও তত বেশী হবে।

Side banner