রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১
কনক্রিট অবকাঠামো নির্মাণের মৌলিক উপাদান হচ্ছে সিমেন্ট। মাটির বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশগত তারতম্যের কারণে বাংলাদেশে একেক স্থানে একেক রকম সিমেন্ট উপযোগী।
বাজারে সিমেন্টের ব্যাগের গায়ের লেখা দেখে উপযোগী সিমেন্ট নির্বাচনের উপায় গুলো কি কি ?
বাজারে সাধারনত দুই ধরনের সিমেন্ট দেখা যায়। একটা হচ্ছে ওপিসি বা ওরডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট। অপরটি হচ্ছে, পিসিসি বা পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট।
ওপিসি সিমেন্টে ক্লিংকারের পরিমান ৯৫ শতাংশ থেকে একশ ভাগ পর্যন্ত থাকে। আর জিপসাম থাকে সর্বোচ্চ ০-৫ শতাংশ। পিসিসি সিমেন্টে ক্লিংকারের পরিমান ৬৫ শতাংশ থেকে ৭৯ শতাংশ। স্লাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও লাইম স্টোনের পরিমান ২১ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং জিপসামের পরিমান সর্বোচ্চ ০-৫ শতাংশ।
বাজারের সিমেন্টের ব্যাগে এই তথ্যগুলো দেখে খুব সহজেই বোঝা যায় কোনটি পিসিসি আর কোনটি ওপিসি সিমেন্ট।
নির্মাণের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে পিসিসি এবং ওপিসি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।
যখন পিসিসি সিমেন্ট ভালো:
যখন ওপিসি সিমেন্ট ভালো:
ল্যবরেটরি ছাড়াও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও হাতের পরীক্ষার মাধ্যমে কিভাবে ভালো সিমেন্ট চেনা যায় সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মীর সিমেন্টের অন্যতম প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম।
তিনি এক স্বাক্ষাৎকারে জানান, কিছু সাধারণ পরীক্ষা ভালো সিমেন্ট চিনতে সাহায্য করে। গুণাগুণ বিচারে এসব পরীক্ষা ১০০ ভাগ গ্রহণযোগ্য না হলেও মোটামুটি আস্থা রাখা যায়।
শরিফুল ইসলাম বলেন, ভালো সিমেন্টের রং পরিষ্কার ধূসর হবে এবং ব্যাগের সব অংশের সিমেন্টের রং একই রকম হবে। ব্যাগের সিমেন্টের মধ্যে হাত ঢুকালে ঠান্ডা (তাপমাত্রা) অনুভব হবে। এক মুষ্টি সিমেন্ট হাতে নিয়ে স্তুপ করলে স্তুপটি অপরিবর্তিত থাকবে (দৃঢ়তা)। গড়িয়ে পড়বে না। পানিতে সিমেন্ট মিশালে সিমেন্ট পুরোপুরিভাবে মিশে যাবে; কোন অংশ ভেসে থাকবে না। হাতের আঙ্গুলের মাঝে সিমেন্ট নিয়ে ঘষলে পাউডারের মত মসৃণ অনুভূত হবে।
পাশাপাশি বাজার থেকে সিমেন্ট কেনার সময় সিমেন্টের ব্যাগের গায়ে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে নিতে হবে। সবসময় তরতাজা সিমেন্ট কিনতে হবে এবং অলস বসিয়ে না রেখে তা ব্যবহার করে ফেলতে হবে।
সিমেন্ট গুদামে বা বাসায় তিন মাস রেখে দিলে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, ছয় মাস রেখে দিলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এবং ১২ মাস রেখে দিলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শক্তি কমে যেতে পারে জানান মীর সিমেন্টের প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম।
পাকা বসতবাড়ি, মসজিদ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিমাণ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এসকল প্রতিষ্ঠান, ঘর পাকা করনের জন্য প্রয়োজন পরে সিমেন্টের৷ বাজারে পাওয়া নানান সিমেন্টের মাঝে আমরা খুঁজি সেরা সিমেন্ট৷ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সেরা ১১ টি সিমেন্ট সম্পর্কে জানবো৷
বর্তমান বাজার এনালাইসিস করে সেরা কিছু সিমেন্টের কোম্পানি নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে এখানে কোন কোম্পানিকে কমার্শিয়ালি প্রমোট করা হয়নি এবং সেটি সম্পর্কে বলা হয়েছে যেটা গ্রাহকের কাছে পজিটিভ ভাবে গ্রহণযোগ্য। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের সেরা ১১ টি সিমেন্ট সম্পর্কে।
শাহ সিমেন্ট বাংলাদেশের সুপরিচিত ও বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন শাহ সিমেন্ট ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর একটি পণ্য৷ বাংলাদেশের বাজারে ২০০০ সাল থেকে শাহ সিমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে৷ বিগত ২২ বছর ধরে শাহ সিমেন্ট সুনামের সাথে এদেশের সিমেন্ট মার্কেটেপ্লেস নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে ৷ বঙ্গদেশের সবচেয়ে ভালো সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শাহ সিমেন্ট অন্যতম শীর্ষস্থানীয়৷
বাংলাদেশে সিমেন্ট তৈরির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঝে যে কয়েকটি বিদেশি সিমেন্ট তৈরি কারক প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে, এর মধ্যে স্ক্যান সিমেন্ট অন্যতম৷
স্ক্যান সিমেন্ট জার্মানির বিখ্যাত সিমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হেডেলবার্গ সিমেন্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হেডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশে লিমিটেড এর প্রস্তুতকৃত পণ্য৷
বাংলাদেশে স্ক্যান সিমেন্ট তাদের যাত্রা শুরু করে ২০০৩ সালে৷ নারায়নগঞ্জে স্ক্যান সিমেন্টের নিজস্ব ফ্যাক্টরি রয়েছে৷
আমাদের দেশে চাইনিজ পণ্যকে মানহীন, ব্যবহার অযোগ্য অবহিত করা হলেও দিনশেষে কিন্তু সেই চাইনিজ পণ্যই আমরা ব্যবহার করে থাকি৷ ঢালাওভাবে চাইনিজ সকল পণ্যর মান খারাপ যেমন বলা যায়না তেমনি এর সুবিধা ভোগকারীদের নিয়ে হাস্যকর করার ও কিছু নেই৷
দেশে অন্যান্য সেক্টরের মতনই সিমেন্ট প্রস্তুতকারী হিসেবে চাইনিজ কোম্পানি শুনসিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সেভেন সার্কেল বাংলাদেশ লিমিটেডের এর উৎপাদন করে থাকে৷ ঢাকার নিকটেই গাজীপুরে সেভেন সার্কেল বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানা অবস্থিত৷
বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের সর্ববৃহত গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের একটি৷ বসুন্ধরার প্রায় সকল পণ্যই আমাদের দেশের সেরা পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়৷ সেই বসুন্ধরা গ্রুপেরই রয়েছে সিমেন্ট প্রস্তুতকারী কারখানা৷ সারা দেশে বসুন্ধরা সিমেন্ট হিসেবে তারা তাদের সিমেন্ট বাজারজাত করে থাকে৷
ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের এর প্রস্তুতকারক৷ অন্যান্য সিমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তুলনামূলকভাবে দেরি করে ২০১২ সালে বসুন্ধরা তাদের সিমেন্ট বাজারে নিয়ে আসে৷ নারায়ণগঞ্জের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হয় বসুন্ধরার এ সিমেন্ট টি৷
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ বাংলাদেশের সর্ববৃহত প্রতিষ্ঠানের একটি৷ নানাবিধ ব্যাবসার সাথে জড়িত এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে নিজস্ব ব্র্যান্ডের সিমেন্ট ও৷ ফ্রেশ সিমেন্ট মেঘনা গ্রুপেরই প্রতিষ্ঠান৷ যারা ফ্রেশ সিমেন্ট বাংলাদেশের বাজারে ২০০১ সাল থেকে বাজারজাত করে আসছে৷ শিল্প অঞ্চল হিসেবে খ্যাত নারায়নগঞ্জে এদের ফ্যাক্টরি অবস্থিত৷
বাংলাদেশের অন্যতম পরিচিত সিমেন্ট ব্রান্ড বলা চলে প্রিমিয়ার সিমেন্ট কে৷ প্রিমিয়ার সিমেন্টের বেশ কিছু বিজ্ঞাপন এদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে৷ প্রিমিয়ার সিমেন্টের উৎপাদন ও সরবরাহকারী হচ্ছে প্রিমিয়ার সিমেন্ট ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড৷ ঢাকার মুন্সিগন্জে অবস্থিত প্রিমিয়ার সিমেন্ট প্রথম বাজারজাত করা হয় ২০০৪ সালে৷
ক্রাউন সিমেন্টের বিজ্ঞাপন আমাদের শৈশবের স্মৃতিতে আজও অম্লান৷ বিটিভিতে প্রায়শই ক্রাউন সিমেন্টের বিজ্ঞাপন আমরা দেখেছি৷ দেশের সবচেয়ে পুরাতন সিমেন্ট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ক্রাউন সিমেন্ট৷
এই সিমেন্ট প্রস্তুত করে থাকে এমআই সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড৷ ১৯৯৫ সালে বাজারে আসা এই সিমেন্ট উৎপাদণ হয় মুন্সিগঞ্জে৷ দেশের চাহিদা মিটিয়ে ক্রাউন সিমেন্ট দেশের বাহিরেও রপ্তানী করা হচ্ছে৷
লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড উৎপাদণ করে সুপারক্রিট সিমেন্ট৷ যদিও এর জন্য পৃথক প্রতিষ্টান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় লাফাজ সুরমা ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড৷ সুনামগন্জের ছাতকে উৎপাদিত হওয়া সুপারক্রিট সিমেন্ট বাংলাদেশে প্রথম বাজারজাত করা হয় ২০০৩ সালের দিকে৷
আকিজ গ্রুপ বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান৷ আকিজ বিভিন্ন সেক্টরে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে রেখেছে৷ সিমেন্ট তৈরিতে ২০০২ সাল হতে বাংলাদেশের বাজারে তাদের পদচারণা৷ ঢাকার নারায়নগঞ্জে রয়েছে আকিজের সুবিশাল ফ্যাক্টরি৷ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভার্টিকেল রোলার মেশিনের মাধ্যমে সিমেন্ট প্রস্তুত করা আকিজ সিমেন্ট দেশের বাহিরেও সিমেন্ট রপ্তানি করে থাকে৷
হোলসিম সিমেন্টের কথা আমাদের অনেকেই জানি৷ বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই হোলসিম তাদের সিমেন্ট বাজারজাত করে আসছে৷ সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্টান লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড হোলসিম সিমেন্ট তৈরি ও বাজারজাত করে থাকে৷ আমাদের তালিকায় থাকা সিমেন্ট তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে হোলসিম সিমেন্ট দ্বিতীয়তে বাংলাদেশের বাজারে এসেছে৷ সেই ২০০০ সাল থেকে হোলসিম সিমেন্ট তৈরি ও বাজারজাত করা হচ্ছে এদেশে৷
গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে নারায়ণগঞ্জে উৎপাদিত মীর সিমেন্টের চাহিদা বেড়েছে। গত ২০ বছরে চার গুণ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দৈনিক ২৪০০ মেট্রিকটন সিমেন্ট উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪ সালের মধ্যে মীর সিমেন্টের উৎপাদন পাঁচ হাজার মেট্রিকটন ছাড়িয়ে যাবে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সিমেন্ট রফতানি করছে প্রতিষ্ঠানটি।