রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১
মহার্ঘ ভাতা হল একটি অতিরিক্ত ভাতা। এটিকে ইংরেজীতে বলা হয় Dearness Allowance । হিসাবে বিজ্ঞানের ভাষায় মহার্ঘ ভাতা হচ্ছে কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ মালিক বা প্রতিষ্ঠানের নিকট একটি ব্যয় অন্যদিকে শ্রমিক বা কর্মীদের নিকট এটি একটি আয়। জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ( দ্রব্য + নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম + যাতায়াত ব্যয় ইত্যাদি ব্যয় বৃদ্ধি) শ্রমিক বা কর্মচারীদের সাময়িক ভাবে মূল বেতনের সাথে যে অতিরিক্ত ভাতা বা অর্থ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয় তাই “মহার্ঘ ভাতা” বলে পরিচিত।
সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিমাসের বেতনের সাথে বিভিন্ন অনুপাত বা হারে এই অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়। মূলত দ্রব্যমূল্যের সাথে সমন্বয় ও মূল্যস্ফিতির সাথে বাজার মূল্যের সমন্বয়ে জীবনযাত্রার মান ঠিক রাখতে এ ভাতা প্রদান করা হয়। ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল জারি করার পর ২০১৩ সালে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের আদেশ জারি করা হয়।
মহার্ঘ ভাতা আদেশ ২০১৩
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যকে অন্তর্ভর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মূল বেতনের ২০% (বিশ শতাংশ) হারে মাসিক সর্বনিম্ন ১,৫০০/- (এক হাজার পাঁচশত টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬,০০০/- (ছয় হাজার) টাকা মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মূলত নিয়োগকারী বা মালিক (Employer) কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মচারীদেরকে (Employees) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বেড়ে যাওয়ার সাথে জীবনযাপনে কুলিয়ে ওঠার জন্য যে বিশেষ ভাতা প্রদান করে তা-ই মহার্ঘ ভাতা । মূল বেতনের নির্দিষ্ট শতকরা অংশ বেতনের সাথে অতিরিক্ত প্রদান করা হয় । এটি প্রতি মাসেই দেয়া হয়ে থাকে । যেমন কারও মাসিক বেতন ১০,০০০ টাকা, আর মহার্ঘ ভাতা যদি হয় ২০% তাহলে তার বেতন দাঁড়াবে ২,০০০ টাকা । সরকারি বা বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে মহার্ঘ ভাতা দেয়া হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ গেজেট ডাউনলোড ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মহার্ঘ ভাতা চালু করা হয়, এবং তারপর তা ‘‘খাদ্য ভাতা” নামে পরিচিত হয়। “ওল্ড টেক্সটাইল ভাতা” ১৯৪৭ সালে চালু করা হয়েছিল এবং ১৯৫৩ সালে “সংশোধিত টেক্সটাইল ভাতা” হিসাবে পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছিল।
বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন ভাতার সমন্বয় কোনভাবে বার্ষিক ৫% বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে সময় হচ্ছে না। দ্রুত গতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবন যাত্রার মানের সাথে খাপ খাওয়াতে মহার্ঘ ভাতা প্রদান আবশ্যক হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালের জাতীয় পে স্কেল জারির পর সম্প্রতি শিক্ষানবিশকাল শেষে ব্যাংকারদের সর্বনিম্ন বেতন হবে ৩৯ হাজার টাকা বেসরকারি খাতের ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একনিষ্ঠতা, নৈতিকতা, মনোবল ও কর্মস্পৃহা অটুট রাখার লক্ষ্যে তাঁদের যথাযথ বেতন-ভাতা প্রদান আবশ্যক।মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর এবং দপ্তরে নিয়ােগ/পদোন্নতি সংশ্লিষ্ট কাজের সম্মানী/পারিতােষিক হার পুন:নির্ধারণ করে প্রায় ৪০% বাড়ানো হয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে একটি ধারণা পাওয়া যায় যে, মহার্ঘ ভাতা চলতি বছরই ঘোষণা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বর্তমান অসহায় অবস্থা থেকে উত্তোরণের ন্যূনতম উপায় মহার্ঘ ভাতা জারি। মহার্ঘ ভাতা ছাড়াও ৭ দফ দাবিতে কর্মচারীগণ আন্দোলন ও মানববন্ধন করছেন।
বিবরণ - সর্বনিম্ন বেতন ভাতা
ব্যাংক কর্মকর্তার শিক্ষানবীশ কালে ন্যূনতম বেতন ভাতা - ২৮০০০ টাকা
শিক্ষানবীশ সমাপ্ত শেষে - ৩৯০০০ টাকা
ক্যাশ অফিসারের ক্ষেত্রে - ২৬০০০ টাকা
পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়কের বেতন - ২৪০০০ টাকা
২২/১১/২০২২ তারিখ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতার কোন খবর নাই। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কোনো সুখবর দেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।