রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১
অ্যাক্সিডেন্ট করে ১৪ গ্রেডের একজন সরকারী কর্মচারীর মাথায় আঘাত লেগেছে। তিনদিন পর জ্ঞান ফিরলে দেখা গেল, তার স্মৃতিশক্তি চলে গেছে। ডাক্তার দেখেশুনে পরীক্ষা করে বললেন, আগের জীবনের কিছুই আর ইনি কখনো মনে করতে পারবেন না! শুধু......
আত্মীয়-স্বজনরা একটু যেন আশার আলো পেলেন। আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন, 'শুধু কী, ডাক্তার সাহেব?'
ডাক্তার সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, 'আগের জীবনের মাত্র একটা কথা সে মনে করতে পারবে। যেটা সে তার পুরো জীবনে সবচাইতে বেশিবার শুনেছে, বলেছে বা ব্যবহার করেছে। মনে রাখবেন, মাত্র একটা কথা। সেটা হতে পারে একটা মাত্র শব্দ, অথবা কোনো বাক্য।
রোগী তখন ঘুমাচ্ছিলো। পরিবারের সবাই একসাথে আলোচনায় বসলো।
মা বললো, 'আমার ছেলে তার জীবনে সবচেয়ে বেশিবার আমাকে 'মা' বলে ডেকেছে। ও অবশ্যই এই মা ডাকটাই বলবে।'
বউ মুখ বাঁকিয়ে বললো, 'আমার সেটা মনে হয়না। আমি ওকে গত ১০ বছরে লক্ষ কোটিবার ভালোবাসি বলেছি। ভালোবাসার অঙ্গীকার করেছি। ও অবশ্যই আমার থেকে শোনা এই ভালোবাসি বা আই লাভ ইউ কথাটা বলবে। আমি শিওর।'
#পাশ থেকে একজন বললো, 'মানুষ তার জীবনে নিজের নামটাই বেশি শোনে, বলে, লেখে৷ এমনকি মানুষের কাছে সবথেকে সুন্দর শব্দটা হলো তার নিজের নাম। সে খুব সম্ভবত তার নামটাই মনে রাখবে।'
অফিসের সহকর্মীরা বললো, 'ও খুব ভালো, দায়িত্ববান, নিষ্ঠার সাথে অফিসের কাজ করে। প্রতিদিন মন দিয়ে গুছিয়ে সব ফাইলিং করে। ফেলে রাখতো না। ও এটাও মনে রাখতে পারে কিন্তু!'
বাবার মনে ক্ষীণ আশা, ছেলে তার নাম মনে রাখবে। মানুষের পরিচয়ই তো বাবার নামে। সবকিছু ভুললেও বাবার নাম কি কেউ ভুলতে পারে?
একমাত্র মেয়ে বললো, 'আমিও বাবাকে জীবনে কমবার 'বাপি' বলে ডাকিনি। বাপি ডাকটাও তো শুনেছে অনেকবার। এটা মনে রাখলে আমি খুব খুশি হবো।'
ডাক্তার সবার আলোচনা শুনে বললেন, 'আসুন, রোগীর ঘুম ভেঙেছে। আমরা ওনাকেই জিজ্ঞেস করি।'
#ডাক্তার রোগীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, 'আপনার কি কিছু মনে পড়ছে?'
#রোগী না সূচক মাথা নাড়লো।
#ডাক্তার আবার বললো, 'একটু চেষ্টা ককরুন, একটা কথা। যেটা আপনি আপনার জীবনে সবচাইতে বেশিবার বলেছেন বা শুনেছেন। মনে পড়ে কি সেই কথাটি?'
রোগী এবার বেশ কিছুক্ষণ পর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
ঘরে উপস্থিত সবার মুখ থেকে একটা আনন্দসূচক আওয়াজ বেরোলো।
ডাক্তার বললেন, 'আপনি কি বলতে পারেন কি সেই কথাটি? যেটা আপনার স্মৃতিশক্তি হারানোর পরও মনে আছে। যে শব্দ বা বাক্যটা আপনি আগের জীবনে সবচেয়ে বেশিবার শুনেছেন, বলেছেন বা আপনাকে আহত করেছে। আমাদেরকে বলুন তো কী সেটা।'
রোগীর ঠোঁট নড়ে উঠলো।
সবাই উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করে আছে। কার কথা বলবে, মা, বাবা, ভালোবাসি নাকি অন্যকিছু।
মায়ের মুখে মাতৃত্বের অহংকার। বউ চায় তার ভালোবাসার স্বীকৃতি। বাবা অপেক্ষায় আছে নিজের সম্মানের।
প্রত্যেকেই চিন্তিত মুখে একে অন্যের দিকে চাইলো। ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা বাজছে। রোগীর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে বেরোলো সেই কথাটি। সবাই প্রচন্ড অবাক হয়ে স্পষ্ট শুনতে পেলো রোগী বলছে,
"সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য দূর করে দ্রব্যমূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পে স্কেল চাই"
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)