রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১
সম্প্রতি দেশের মানুষের রুচির অধ:পতন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ হিরো আলমকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর এই বক্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা হয়েছে।
জনাব মামুনুর রশিদ যদি হিরো আলমের চেহারা এবং তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেন সেটি দুঃখজনক। আর যদি চলচিত্রে তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করেন, সেটি যথার্ত বলেই আমি মনে করি।
অপরদিকে, এই সমালোচনায় হিরো আলমের বক্তব্য আরো স্পষ্ট। তিনি বলেছেন - "কেউ আমাকে রুচিশীল হতে সাহায্য করেন নি"। তাঁর এ বক্তব্যকে আমরা কেউ এড়িয়ে যেতে পারি না।
তাই রুচি নিয়ে আমার কিছু কথা-
একটি দেশের উন্নয়নের প্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে - 'রুচিশীল মানুষ' তৈরি করা। যা কখনোই এদেশে কেউ চেষ্টা করেছেন বলে আমার মনে হয়নি। বরং ধীরে ধীরে রুচির অধ:পতন হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
ছোট বেলায় এক নানীকে দেখতাম - তাঁর এক জামাইয়ের আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতি নেই বলে, সেই মেয়ের বাড়ীতে তিনি যান না এবং তাদের কিছু তিনি গ্রহণ করেন না। এখন এমন কাউকে চোখে পড়েনা। বরং যিনি যত বেশী আয় করেন তিনিই তত জনপ্রিয়। মায়ের কাছেও সেই সন্তান অধিক যোগ্য। মসজিদের ইমাম সাহেবও তার জন্য দোওয়ায় লম্বা টান দেন - বাহ কী রুচির সমাজ! থাক এ প্রসঙ্গ।
আজকে সোশ্যাল মিডিয়ার বোদ্ধাদের রুচি নিয়ে লিখতে চাই -
সমাজের অনেক উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি (সরকারি কর্মকর্তাও) তাঁদের বিবাহ বার্ষিকীতে বা হানিমুনে স্ত্রীকে নিয়ে এমন পোস্ট দেন - যা দেখলে বোঝাই যায় না যে - এটা পাব্লিক পোস্ট। এই পোস্ট পোস্টদাতার সন্তান বা তাঁর বাবা মা বা অন্য গুরুজনেরা দেখবেন।
ক্ষমতাবান ব্যক্তি অহেতুক একটা পোস্ট দিলেও বা প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করলে সেখানে কমেন্টস নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন সোশ্যাল মিডিয়ার বোদ্ধারা, কমেন্টের ভাষাতো সেই তৈলাক্ত।
খুবই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- রুচিহীন অনেক পোস্টে 5k, 7k কমেন্টস! সমাজের উচ্চ স্তরের ব্যক্তিরাও এসব পোস্টে কমেন্টস করেন (কিছু স্ক্রিনশট দিলাম শেয়ার, কমেন্টস বা রিয়্যাক্ট এর সংখ্যা দেখার জন্য)। আর ফেসবুকের অশালীন ক্লোজ গ্রুপের ভাষা বাদই দিলাম।
তাহলে কী শুধু হিরো আলমের রুচিতেই সমস্যা? নাকি সমাজ রুচির দুর্ভিক্ষে পড়েছে ? আপনার আমার রুচি ঠিক আছে তো?
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু সমাজের দর্পন। কোনো সমাজের মানুষের চিন্তা চেতনা বা রুচি সোশ্যাল মিডিয়া হতে জানা যায়। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো সেজন্য সোশ্যাল মিডিয়া হতে মানুষের রুচির অভিপ্রায় ক্রয় করেন।
ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান
বিসিএস, সাধারণ শিক্ষা;
পিএইচডি, হুয়াজং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চীন