শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

পরীক্ষা না দিয়েও পলাতক ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস

জীবন যাপন জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ১১:৫১ এএম
পরীক্ষা না দিয়েও পলাতক ছাত্রলীগ নেত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী পরীক্ষা না দিলেও তাকে পাস করানোর অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের পরিচালক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞান অনুষদের সমন্বয়ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গনসংযোগ বিভাগের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বেরোবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) তানজিউল ইসলামকে আহ্বায়ক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. ইলিয়াছ প্রামানিককে সদস্য এবং গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হান্নান মিয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিকে কোনও সময় বেঁধে না দিয়ে অবিলম্বে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এই কমিটি করে প্রশাসনের একটা নাটক সাজাচ্ছে।

এদিকে তদন্ত কমিটি গঠন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ ও শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বেরোবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে সামনের সারিতে থাকতেন গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশী। গত ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাইদ হত্যার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।

তবে ছাত্রলীগ নেত্রী ঐশী পলাতক থাকলেও তাকে  ছাড়াই গত ডিসেম্বর মাসে গণিত বিভাগের মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের ৫১০২ কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পরীক্ষায় তাকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, তাকে ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিতির জন্য ৫ নম্বরসহ ২৫ নম্বরের মধ্যে ২১ নম্বর প্রাপ্ত দেখানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে গণিত বিভাগ সহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে বেরোবিতে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।

এ বিষয়ে ঐশীর সহপাঠীরা বলেন, ওই কোর্সের পরীক্ষার দিন আমাদের সঙ্গে তাকে পরীক্ষা দিতে দেখিনি। তবে অন্য সময় বা অন্য কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছে কি না বলতে পারছি না। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে ক্যাম্পাস থেকে উধাও হওয়া শিক্ষার্থী কীভাবে ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষা দিল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন বলেন, আমি পরীক্ষা জুলাই-আগস্টের আগেই নিয়েছি। মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের সব বিষয় আগেই শেষ করে ফেলছি আমরা। তখন সে পরীক্ষা দিয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।

কিন্তু ওই ব্যাচের সিআরের দেওয়া পরীক্ষার নোটিশ থেকে জানা যায়, গণিত বিভাগের মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের ৫১০২ কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১০ ডিসেম্বর।

এ বিষয়ে ওই বিভাগের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক হান্নান মিয়া বলেন, সংশ্লিষ্ট কোর্স টিচাররা এসব দেখাশোনা করেন। তারা আমাদের রেজাল্ট দেন। আমরা সেটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে পাঠাই।

অপরদিকে গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. কমলেশ চন্দ্র রায় বলেন, আমি জুলাই অভ্যুত্থানের পরে ওই শিক্ষার্থীকে বিভাগে কখনও দেখিনি। তার পরীক্ষার বিষয়ে আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে পলাতক ছাত্রলীগ নেত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন ঐশীর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ওই পরীক্ষা দিয়েছি, তবে কবে দিয়েছি তারিখটা মনে নেই।

Side banner