রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

ভোল মাছ একটিই ৪ লাখ টাকা: কী আছে এই মাছে, কেন এত দাম

জীবন যাপন ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৭:৩১ পিএম
ভোল মাছ একটিই ৪ লাখ টাকা: কী আছে এই মাছে, কেন এত দাম
ভোল মাছ

মাত্র একটি মাছ। ওজন ২৫ কেজির বেশি। দাম হাঁকা হয়েছে ৪ লাখ টাকা। কী মাছ এটি? জানা গেল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পরিচিত কালো দাগযুক্ত ‘ক্রোকার মাছ’ নামে, আর দেশের মানুষ চেনেন ‘ভোল মাছ’ নামে।

মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্রোটোনিবিয়া ডায়াকানথুস’। বিশ্বের সবচেয়ে দামি সামুদ্রিক মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মাছকে বলা হয় ‘সি গোল্ড’ বা সামুদ্রিক সোনা।

রবিবার একটি ভোল মাছ ধরা পড়েছে সুন্দরবন এলাকায়। ২৫ কেজি ৩৬০ গ্রাম ওজনের মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ৪ লাখ টাকা। মানে প্রতিকেজির দাম প্রায় ১৬ হাজার টাকা।

এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরের বিরল প্রজাতির ভোল মাছ ধরা পড়ে ফারুক নামে এক জেলের জালে। পরে দুটি মাছ বিক্রি হয় সাড়ে ১৮ লাখ টাকায়। একই বছরের ১০ নভেম্বর বাগেরহাট দুবলারচরের জেলেদের জালে ধরা পড়া ২৮ কেজি ওজনের আরেকটি মাছ বিক্রি হয় সাড়ে ৮ লাখ টাকায়।

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে সেন্টমার্টিনের আশপাশে সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে এ মাছ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে। সৈকত থেকে সমুদ্রের ১০-১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চরম দূষণই এই মাছ কমে যাওয়ার কারণ।

কেন এত দামী

গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিনে ভরপুর এই মাছ। তবে মাছটির এত উচ্চমূল্যের কারণ এর এয়ার ব্লাডার বা সুইম ব্লাডার। বাংলায় যাকে বলা হয় বায়ুথলি, এটি মাছকে পানিতে ভাসিয়ে রাখে। বাতাস ভর্তি সাদা রংয়ের এই বস্তুটি স্থানীয় ভাষায় পরিচিত ফ্যাপড়া বা পটকা নামেও।

মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. গাজিউর রহমান বলেন, ভোল মাছের বায়ুথলি দিয়ে মানুষের চিকিৎসায় সার্জারির জন্য ব্যবহৃত উন্নতমানের সুতা তৈরি করা হয়। এছাড়াও তৈরি হয় দামি প্রসাধনী। জাপানে বিভিন্ন ওষুধও তৈরি করা হয় এ মাছের বায়ুথলি দিয়ে।

যে মাছের বায়ুথলী যত বড় হয় তার মূল্যও তত বেশি হয়। গাজিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন মাছের এয়ার ব্লাডার সংগ্রহ করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা বিপুল। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এই মাছের ব্লাডার সংগ্রহ করে। তবে স্ত্রী মাছের তুলনায় পুরুষ ভোল মাছের দাম বেশি হয়।

পুষ্টিগুণে অতুলনীয়

শুধু দামি এয়ার ব্লাডারের কারণেই নয়, পুষ্টিগুণেও অতুলনীয় এ মাছ।  বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের পেশাদার অনলাইন নেটওয়ার্ক রিসার্চগেটে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে জানা গেছে, ভোল মাছ আয়োডিন, ওমেগা-৩, ডিএইচএ, ইপিএ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফ্লোরাইড থেকে শুরু করে সেলেনিয়াম পর্যন্ত বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। এই মাছে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, যা দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভোল মাছে থাকা কোলাজেন বলিরেখা প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা অক্ষুণ্ন রাখে। মাছের ওমেগা-৩ উপাদান শিশুদের আইকিউ উন্নত করে। এই মাছ নিয়মিত খেলে শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ বৃদ্ধি উদ্দীপিত হয়। এছাড়াও মাছে থাকা বিভিন্ন খনিজ এবং ভিটামিন মানুষের পেশি টান করার ক্ষেত্রে উপকারী। এতে থাকা কোলাজেন এবং ইলাস্টিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি সরবরাহ করে যা মানবদেহের পেশিগুলোতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দূষণে হারাচ্ছে ‘সমুদ্রের সোনা’

প্রধানত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এই মাছ পাওয়া যায় জানিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. গাজিউর রহমান বলেন, আগে সেন্টমার্টিনের আশপাশে সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে ভোল মাছ পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় কালেভাদ্রে। কারণ সৈকত থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার গভীর সমুদ্র পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে চরম দূষণ। বিশাল এই জলরাশি ঢাকা পড়েছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের আস্তরে। তাই এই জাতীয় মাছ মাইগ্রেট করে অন্য এলাকায় বা গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। ফলে ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সব অঞ্চলেই এই মাছ ধরা পড়ার পরিমাণ অনেক কমে গেছে।

ভোল মাছে ভাগ্য

ভোল মাছের বদৌলতে লাখপতি হয়েছেন দেশ ও বিদেশের অনেক সাধারণ জেলে। তেমনি কোটিপতিও হয়েছেন কেউ কেউ। তাদেরই একজন ভারতের দীঘার জেলে গিরিশচন্দ্র রাউ। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি তার জালে একবারেই ধরা পড়ে ১২১টি ভোল মাছ। নিলামে যার দাম কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ মাছের জন্য রাতারাতি কোটিপতি বনে যান গিরিশচন্দ্র। একই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, তার আগের বছরের নভেম্বরেও ভোল মাছ ধরে কোটিপতি হয়েছেন দুজন।

Side banner